0 0
0
No products in the cart.

Welcome to Ghashful Online Shopping Store!

পরিবেশবান্ধব আম উৎপাদন করে রপ্তানির বাজারে প্রবেশ করলেন মোঃ জিয়াউর রহমান

Aug 27, 2023 / By System Admin / in Case Study

 

পটভূমিঃ

 

আমি 
মোঃ জিয়াউর রহমান
 
সাপাহার উপজেলার
,
জয়পুর গ্রামের একজন বাসিন্দা। 
আমি
একজন আম বাগানী। বিগত ২০১৩
সালে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে মাত্র ১০ বিঘা জমি নিয়ে আম চাষ শুরু করি। 
পূর্বে 
আমি
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে নিয়োজিত ছি
লাম
। দীর্ঘদিন কাজ ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর আমি নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবছিলাম।
পরে
আম চাষের মাধ্যমে চাকুরী জীবনের অবসান ঘটিয়ে উদ্যোক্তা হবার সিদ্ধান্ত নেই।
 
শুরুতে খুবই অল্প পরিসরে আম চাষ শুরু করি কিন্তু বর্তমানে আম চাষই আমার প্রধান ব্যবসা। আস্তে আস্তে আম চাষে জমির পরিমাণ বাড়াচ্ছি। 
বর্তমানে আমার আম বাগানের জমির পরিমাণ ১৬২ বিঘা। 
বাগানে আম্রপালি, বারি-৪, আশ্বিনা, ফজলীসহ বিভিন্ন জাতের
গাছ আছে। 
এবং উপজেলা কয়েক
স্থানে আমার আম বাগান প্রকল্প চালু রয়েছে।

 

প্রশ্নসমূহঃ

 

১।
আপনি প্রথমে কিভাবে এসইপি-তে যুক্ত হলেন এবং বর্তমানে আপনার অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন?

 

 

ঘাসফুল এসইপি প্রকল্পের সাথে জরিত হওয়ার প্রধান কারণ
হল
 
আমার আম ব্যবসা। ব্যবসাকে বড় পরিসরে নিয়ে যেতে আমি আস্তে আস্তে জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকি, বর্তমানে সর্বসাকুল্যে আমার আম বাগানের জমির পরিমাণ ১৬২ বিঘা। এর মধ্যে এই বৎসর ফলন নিয়েছি ৪২ বিঘা বাগানে। এত জমি পরিচর্যার করার জন্য যে পরিমাণে সঞ্চয় দরকার ছিল সে
ই পরিমাণ অর্থ
 
আমার 
কাছে 
ছিল না। 
আমার 
এক বন্ধু
 
ইতোমধ্যে ঘাসফুলের সদস্য মারফতে জানতে পারি ঘাসফুলে এসইপি প্রকল্পের অধীনে মৌসুমী ঋণ দেয়। তখন আমি ঘাসফুল প্রকল্প অফিসে যোগাযোগ করি এবং উনাদের দ্বারা উদ্ভুদ্ধ হয়ে
 
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ঘাসফুলের সদস্য্য হিসেব অন্তর্ভুক্ত হয় । 
এবং
 
সংস্থার এসইপি প্রকল্প হতে পরিবেশবান্ধব আম চাষের উপর গত ১৯/০১/২০২১ ইং তারিখে ৫০০০০০ টাকা 
মৌসুমি 
ঋণ গ্রহণ করে আম বাগানে বিনিয়োগ ক
রি। 
এবং ঐ টাকা পাওয়ার পরে আমার বাগান পরিচর্যা অনেক সহজ হয়ে যায়। বর্তমান মৌসুমে আমি আম বিক্রি করে ৪৫ লক্ষ টাকা আয় করি। এবং আমার বাগানের ৬ টন আম্রপালি আম ঘাসফুল এসইপি টিমের সহায়তায়
এতে আমি অনেক লাভবান হয়েছি সাথে সাথে নিজেকে গর্বিত মনে করি।

 

 

২। এসইপি-তে যুক্ত হওয়ার ফলে আপনার জীবনের যে পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন, সেটির পূর্বে আপনার অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করুন। 

 

এসইপি প্রকল্পের সংশ্লিষ্টতার আগে তার আম বাগানে ব্যাবস্থাপনা ছিলো
 
গতানুগতিক ও 
অনুন্নত
। 
আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারণা ছিল না।
 
রাসায়নিক সার ও কীটনাশক 
ব্যবহার পরিবেশ সহনীয় মাত্রায় ব্যবহার করে,
জৈব 
বালাইনাশকের ব্যবহার করে
পরিবেশের কোন ক্ষতি ছাড়াও আম চাষ
 
করা যায় সে সম্পর্কে কোন কারিগরি জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ ছিলনা। আমার বাগানে কীটপতঙ্গ
 
রোধে মাত্রাতিরক্ত কীটনাশক ব্যবহার করতাম। এবং যত্রতত্র কীটনাশকের প্যাকেট পড়ে
 
থাকতো।

 

অতঃপর সংস্থা থেকে ঋণ
 
গ্রহনের 
পর 
আম বাগানে পরিবেশগত উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি প্রদান ক
রি
 
প্রতিশ্রুতি
 
অনুযায়ী পরিবেশ
 
বান্ধব আম বাগানে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে 
এসইপি প্রকল্পের আওতায় আধুনিক আম বাগান
 
এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়ায় সাথে সাথে
আমি
আম
 
বাগানে সার্বিক উন্নয়নে এসইপি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল সামাজিক ও পরিবেশগত নিয়ম-নীতি
 
প্রতিপালন ও বাস্তবায়নে 
করি।

 

আগে আম বিক্রি নিয়ে শুধুমাত্র আমাদের স্থানীয়বাজারের উপর নির্ভর করতে হত। কিন্তু এখন অনলাইন ব্যবসার সাথে সাথে উন্নত বাজারের সাথে আমি পরিচিত হয়েছি। এবং আম বিক্রি করে বেশি লাভবান হচ্ছি। এখন অনেক বাগানীই আমার নিকট পরামর্শের জন্য আসে।

 

 

৩। এসইপি-এর হস্তক্ষেপের ফলে পরিবর্তনটি কীভাবে ঘটল (প্রক্রিয়া) এবং কীভাবে পরিবর্তনগুলি আপনার জীবনকে প্রভাবিত করেছে (ফলাফল)?

 

এসইপি প্রকল্পের সাথে যুক্ত হওয়ার পরে প্রথম যে পরিবর্তনটা ঘটে সেটি হল আমার আম বাগান ব্যবস্থাপনায় এসেছে আধুনিক ও নতুনত্বের ছাপ। ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে আমার বাগানের পরিবেশের। আগে বাগানে সাধারনত যত্রতত্র ময়ল-আবর্জনা (কীটনাশকের প্যাকেট, বোতল, পলিথিন) পড়ে থাকতো। এসইপি টিমের পরামর্শে বাগানের পরিবেশ উন্নয়নে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করি। এখন বাগানে কোথাও কোন ময়লা পড়ে থাকে না। এবং বাগানে কাজ করার সময় আমার শ্রমিকরা যদি কোন প্রকার 
 
হাতে পায়ে আঘাত পায়, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফাস্ট এইড বক্সের ব্যবস্থা করেছি। এতে আমার বাগানের শ্রমিকরা অনেক খুশি। 

 

পুর্বে কীটপতঙ্গ রোধে শুধু মাত্র কীটনাশকই স্প্রে করাই একমাত্র পন্থা হিসেবে জানতাম। এসইপি প্রকল্পের সাথে যুক্ত হওয়ার পরে প্রকল্প হতে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে আম চাষ ও বাজারজাতকরণ ও বাগানে সার ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। প্রশিক্ষণে অনেক কৃষিবিদ বাগান ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক পরামর্শ প্রদান করেন। এবং বাগানে কীটনাশক স্প্রে কমিয়ে ফেরোমন ট্র্যাপ, ইয়োলো ও ব্লু ট্র্যাপ এবং ম্যাংগো ব্যাগের ব্যবহার বাড়িয়ে বাগানে পোকামাকড় রোধ করা যায় সে সম্পর্কে কোন পূর্ব ধারণা ছিল না। এসইপি প্রকল্প আমার একটি বাগানে প্রায় দেড় বিঘা জমিতে প্রদর্শনী প্লট করেন। প্রদর্শনী প্লটে উনারা পোকামাকড় রোধে চুন, ফেরোমন, ব্লু ও ইয়োলো ট্র্যাপের ব্যবহার করেন। এবং প্রদর্শনী প্লটে ম্যাংগো ব্যাগের ব্যবহার করেন। এতে করে আমার বাগানের পরিবেশের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। উনাদের পরামর্শ ও আমার আগ্রহে প্রায় পঞ্চাশ হাজার আমের ব্যাগের ব্যবহার করি। এতে করে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। ব্যাগের ব্যবহারের কারণে আম সংগ্রহের সময় বেড়ে যায়। এতে করে আমগুলি আমি বেশি দামে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হয়েছি।

 

তাছাড়াও আগে আমার আমগুলি শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারে আড়তাদারদের নিকট বিক্রি করতাম। এসইপি টিমের নিকট আমি বিদেশে রপ্তানি সম্পর্কে শুনি এবং আগ্রহী। এরপর এসইপি প্রকল্পের আয়োজনে 
গ্লোবাল
গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস 
(
GGAP
) উপর এক কর্মশালায় অংশগ্রহন করি। ওখানে গ্লোবাল গ্যাপের একজন বড় কর্মকর্‍তা পরামর্শ প্রদান করেন কিভাবে বিদেশে আম পাঠানো যায়। এই ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে এসইপি টিমের পরামর্শে বাগানে পরিবেশবান্ধব চর্চা শুরু করি। ফলশ্রুতিতে এসইপি টিম
ও 
এক্সপোর্টারের সহায়তা আমার বাগানের ছয় টন আম্রপালি আম
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করি, তারপর সেই আম গুলো বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে উপহার হিসেবে প্রেরণ করেন। এতে করে আমি অর্থনৈতিক বেশি লাভবান হই কারণ ম্যাংগো ব্যাগের আম বাজারের সাধারণ দাম হতে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়। এবং আমি অর্থনৈতিকভাবে বেশি স্বাবলম্বী হতে সক্ষম হই। এখন আমার এলাকার ও পাশের বাগানীরা আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে আসে কিভাবে বিদেশে পাঠানোর উপযোগী আম চাষ করা যায়। আমি সবসময় সৎ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। 

 

 

৪। উল্লেখিত পরিবর্তনটি কীভাবে অন্যান্য ক্ষুদ্র-উদ্যোগের মালিক/পরিবার/শ্রমিক/সম্প্রদায়গুলিতে প্রভাব ফেলছে (ফলাফল)? 

 

এসইপি টিমের পরামর্শে যখন আমি বাগানে আমের ব্যাগের ব্যবহার করি অনেকেই বলেছিল যে ব্যাগের আমের চাহিদা নাকি বাজারে নাই। তারপরেও এসইপি টিমের পরামর্শে আমি পঞ্চাশ হাজার ব্যাগ কিনে ব্যবহার করি। এবং আমি লক্ষ করি আমার অন্যান্য বাগানের আমের তুলনায় এই বাগানের আম পরিপক্কতা আসতে বেশি সময় নেয়। এবং আমটি দেখতে উচ্চমান সম্পন্ন হয়। 

 

এখন্য অন্যান্য আম চাষীরা আমার নিকট আসে পরামর্শের জন্য। কিভাবে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে আম চাষ করে প্রিমিয়াম বাজারে বিক্রি করা যায়। আমি নতুন ও পুরাতন চাষীদের পোকামাকড়ের হাত থেকে আম বাগান রক্ষ করতে কীটনাশকের পরিবর্তে আমের ব্যাগের ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করি। এতে করে পাশের আম বাগানীরাও আমের ব্যাগের ব্যবহার শুরু করে।

 

বাগানের পরিবেশ উন্নয়নে শ্রমিকের বিশ্রামের জন্য ঘর ও বসার স্থান, সৌরবিদ্যুত ও ফাস্ট এইডের ব্যবস্থা থাকার কারণে আমার শ্রমিকেরা অনেক বেশি খুশি। এবং এটা আমার জীবন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এখন আমি আমার পরিবারের সকল চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

 

 

৫। উপরে উল্লেখিত পরিবর্তন কেন আপনার কাছে তাৎপর্যপূর্ণ?

 

এই পরিবর্তনগুলো আমার কাছে খুবই 
তাৎপর্যপূ
ণ তার প্রথম কারণ আমি অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছি। স্থানীয় বাজারের শুধুমাত্র নির্ভর না করে অনলাইন ও প্রিমিয়াম বাজারে চড়ামূল্যে আমার বাগানের আম বিক্রি করতে পারছি। এটা আমাকে অর্থনৈতিভাবে স্বয়ংসম্পন্ন হতে সাহায্য করছে।

 

আমার বাগানে শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্য ঘর ও বসার স্থান, সৌরবিদ্যুত ও ফাস্ট এইডের ব্যবস্থা থাকার কারণে খুশি মনে কাজ করতে পারছে।

 

এবং
 
আমার এলাকার অনেক নতুন ও পুরাতন আম বাগানী আমার কাছে কখন কোন সার, কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে সেই সম্পর্কে পরামর্শ নিতে আসে। আমি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে আম চাষ করতে পরামর্শ প্রদান করি। 

 

 

৬। অতিরিক্ত মন্তব্য, যদি থাকে 

 

সাপাহার উপজেলায় পানির অনেক সমস্যা। এর জন্য আমাদের আম উৎপাদনের পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়। এর জন্য যদি এসইপি প্রকল্প হতে সাব-মার্সেবল পানির পাম্পসহ
ড্রিপ ইরিগেশনের
জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এই এলাকার আম চাষীদের জন্য অনেক কল্যাণকর হবে। আমি ঘাসফুল এসইপি (পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন ও ওয়ার্ড ব্যাংক) প্রকল্পের উপর আমার ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারণ উনারা আমাকে পরিবেশবান্ধন ও আধুনিক উপায়ে আম চাষে আমাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং আমার বাগান নিয়মিত পরিদর্শন করেন। এবং আমার আশা থাকবে এই প্রকল্প হতে এই উপজেলার বাসিন্দারা দীর্ঘ সময় ধরে সেবা পায়।